সরিষা তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম-জানুন
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সরিষা তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি অনেক বেশি ইনফরমেটিভ হবে।
তাই আপনি যদি সরিষার তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
ভূমিকা
প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা অনেকেই সরিষার তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে বা কিভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন। আপনাদের এসব দিক বিবেচনা করে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য লেখা।
আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন। তাই মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
সরিষা তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম-জানুন
সরিষার তেলে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা অনেকের অজানা। সরিষার তেলের ওমেগা আলফা থ্রি ওমেগা আলফার সিক্স ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এর সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে পুষ্টিগুনে ভরপুর বলা হয়। এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ যা প্রাচীনকাল থেকেই পূর্বপুরুষরা ব্যবহার করে আসছে এবং উপকৃত হচ্ছে।
আমাদের ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য সরিষার তেল অনেক উপকারী। নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় বিশেষ করে যাদের খারাপ কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় পাশাপাশি যারা নিদ্রা হীনতায় ভোগে অর্থাৎ ঘুম কম হয় তাদের জন্য সরিষার তেল বেশ কার্যকর পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধক। সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে শরীরের ব্যথা কমায় যা প্রাচীনকাল থেকেই এই পদ্ধতি চলে আসছে।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকলে তা কমাতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রক্ত সঞ্চালন সৃষ্টি করে এবং সেক্স হরমোন বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে আমাদের মাথা ব্যাথা কমায়। বিশেষ করে যাদের ত্বক শুষ্ক বা ড্রাই।
তারা যদি নিয়মিতভাবে সরিষার তেল মাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে তাহলে তাদের ত্বক অনেক মসৃণ ও কমল হবে। যাদের ঠোঁট শুকিয়ে থাকে তারা চাইলে সরিষার তেল ঠোটে লাগালে ঠোঁট নরম ও কমল থাকবে। শীতের সময় সরিষার তেল মাখলে ত্বক অনেক সুন্দর থাকে।
পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী যা ,আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ঠান্ডার সময় ঠান্ডা,কাশি সর্দি ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের রোগ এর হাত থেকে আমরা রক্ষা পায়।
মজার ব্যাপার হলো সরিষার তেল পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না যার কারণে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে সরিষার তেল, এ সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা চাইলে নিঃসন্দেহে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন, ঠান্ডা জনিত কারণে অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে আসে।
সেক্ষেত্রেও সরিষার তেল অনেক উপকারী, কানের মধ্যে ব্যথা হলে সহ্য করা খুবই মুশকিল সরিষার তেল এক্ষেত্রে কানের ড্রপারের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের শরীরে কোথাও যদি সামান্য কাটা ছেঁড়া হয় সে ক্ষেত্রে এটি এন্টিসেপটিকের কাজ করে থাকে।
সরিষার তেল এর মধ্যে ফ্যাটি এসিড থাকার কারণে শরীরে কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। তবে পরিমাণে বেশি খাওয়া উচিত নয়। আমরা অনেকেই সরিষার তেল দিয়ে রান্না বান্না করে খেয়ে থাকি আবার অনেকেই ভাজা ভাজি করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে।
খাওয়ার জন্য কোন তেল মানব শরীরের জন্য খুব ভালো নয়, পরিমাণমতো খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, না করলেই নয় এমনটা চিন্তা করে সামান্য পরিমাণে প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই খাবার ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো নিয়ে নিয়ম করে খেতে পারেন।
সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা এবং সরিষার তেল খাওয়ার উপকারিতা-জেনে নিন
প্রিয় বন্ধুগণ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বা প্রয়োজনে সরিষার তেল মালিশ করতে দেখেছি। নিয়মিত এই তেল মালিশ করলে যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা দারুন উপকার পেয়ে থাকে। এই তেল ব্যবহারের ফলে দাঁত মজবুত করে এবং মালিশের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
সরিষার তেল প্রতিনিয়ত মালিশ করার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ধীরে ধীরে দেখা যায়, শরীরের মধ্যে বিশেষ ধরনের এনার্জি পাওয়া যায়, মাংসপেশী মজবুত হয়, নিজেকে বেশ শক্তপুষ্ট মনে হয়, এর মধ্যে থাকা প্রচুর পুষ্টিগুণ যা আমাদের মানব শরীরের ভেতর এবং বাইরে থেকে উপকার করে থাকে।
এটা প্রমাণিত যে সরিষার তেল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যার কারণে আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমাদের দাদি-নানীরা সরিষার তেল গায়ে মালিশ করে রোদের মধ্যে রেখে দিত। এর মধ্যে থাকা ন্যাচারাল যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তা আমাদের ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
এই তেলের ব্যবহার ঐতিহ্যগতভাবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এটি স্বাস্থ্যগত সুবিধায় পরিপূর্ণ। এই তেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড যা স্বাস্থ্যের কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশ কার্যকর।
চুলে সরিষার তেলের উপকারিতা-সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
প্রিয় বন্ধুরা, সরিষার তেল চুলে ব্যবহারের মাধ্যমে কি যে উপকার হয় তা আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। তাই আমরা অনেকেই সরিষার তেল চুলে তেমন একটা ব্যবহার করতে দেখা যায় না, কিন্তু আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে প্রচুর পরিমাণে সরিষার তেল চুলে ব্যবহার করতে দেখেছি।
সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে বিশেষ করে চুলে ব্যবহারের ফলে চুলকে ঝলমলে করে তোলে, যাদের খুশকি জনিত সমস্যা রয়েছে, তারা যদি নিয়মিত সরিষার তেল চুলে ব্যবহার করে তাহলে খুশকি জনিত সমস্যা থাকলে তা দূর হয়ে যাবে।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে চুলে ভালো করে সরিষার তেল হাতের তালুতে লাগিয়ে মেসেজ করুন বেশ কয়েক মিনিট ধরে যেমনি আরাম পাবেন তেমনি এর ফলে চুল পাকা রোধ করবে। তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সরিষার তেলের গুনগত মান থাকতে হবে।
সরিষার তেল যদি ন্যাচারাল বা অর্গানিক না হয় তাহলে তা ঠিকমতো উপকার না পাওয়া যেতে পারে। তাই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাঁটি তেল ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে, তাহলে সর্বোচ্চ উপকারটি পাওয়া যাবে। সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আছে।
এটি নিয়মিত হাতের তালুতে কিছু পরিমাণ সরিষার তেল নিয়ে চুলে সুন্দর করে মেসেজ করতে পারলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই যারা চুল গজায় না এমন সমস্যায় ভুগছেন, তারা চাইলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন।
ত্বকে সরিষার তেলের উপকারিতা এবং সরিষার তেল মুখে দিলে কি হয়?-জেনে নিন
সরিষার তেল ত্বককে সুস্থ রাখতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রি ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। মেকআপ তুলতে এমনকি লোম পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তুলোতে কয় ফোটা সরিষার তেল নিয়ে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
সরিষার তেলের প্রদাহ এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক উপাদান ত্বকের ব্রণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তারা চাইলে প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী ত্বকের সরিষার তেল লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে হাতের তালুতে কয়েক ফোটা সরিষার তেল নিয়ে মুখের ত্বকে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট ধরে মালিশ করতে থাকুন।
এভাবে কমপক্ষে এক ঘন্টায় রাখতে হবে তারপরে পরিষ্কার পানি বা হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। তারপরে যারা ব্রণের দাগ দূর করতে চান তারা চাইলে সরিষার তেল ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনাকে যেভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটা হল এক চা চামচ সরিষার তেল তার মধ্যে এক থেকে দুই চামচ ময়দা এবং লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রনের দাগ আস্তে আস্তে কমে যাবে।
তাই ব্রণের দাগ দূর করতে বা মুখের কালো দাগ দূর করতে সরিষার তেল কার্যকারী ভূমিকা রাখে। শরীরের যেকোনো স্থানের কালো দাগ দূর করতে সরিষার তেল অনেক কার্যকর।
পরিশেষে
প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সরিষার তেলের গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন এবং আমি আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন। যদি কিছুটা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি সকলের সাথে শেয়ার করবেন।
এই ধরনের আর্টিকেল সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের পাশেই থাকুন। সবশেষ আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের মঙ্গল কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url