আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়-সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়, ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল তেল, অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি অনেক বেশি ইনফরমেটিভ হবে।
তাই আপনি যদি অলিভ অয়েল তেল সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
ভূমিকা
প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা অনেকেই অলিভ অয়েল তেল সম্পর্কে জানতে বা কিভাবে এই তেল ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন। আপনাদের এসব দিক বিবেচনা করে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য লেখা।
আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন। তাই মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়-Extea virgin olive oil
অলিভ অয়েল তেল বাজারে এভেলেবল পাওয়া যায় কিন্তু কোনটা আসল আর কোনটা নকল এটা চিনতে হবে। এই তেল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ব্যবহার করতেন। সেই হিসেবে প্রত্যেকটা মুসলমানের এই তেল ব্যবহার করা সুন্নত।
সাধারণত আসল অলিভ অয়েলের মেয়াদটা বেশি থাকে। তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই তেল দুই বছর মেয়াদ দিলেও তারা এর পূর্বেই ব্যবহার শেষ করার পরামর্শ দেয় এবং সেটি বোতলের গায়েও লিখে দেন। যদি বোতলের গায়ে মেয়াদ তিন থেকে চার বছর লেখা থাকে।
তাহলে বুঝতে হবে সেই অলিভ অয়েল তেলটা নকল। এই তেল কোন অবস্থাতেই কেনা যাবে না বা ব্যবহার করা যাবে না। আসল অলিভ অয়েলের দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হয়ে থাকে এবং এটা খুবই রেয়ার একটি পণ্য। বর্তমানে এই তেল বাজারে সহজে পাওয়া যায় না।
কারণ এ তেল দামি হওয়ার কারণে অনেক মানুষ কিনতে চায় না এবং এর গুণগত মান মানুষ বুঝতে পারে না। তাই এ তেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে এই তেলের বিক্রির হার কমে যাওয়ার ফলে উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমছে।
আসল অলিভ অয়েল তৈরি করার সময় এটা কাচের বোতলে তৈরি করা হয় এবং সূর্য থেকে দূরে রাখা হয়। যদি অতিরিক্ত তাপমাত্রায় তেল রাখা হয় তাহলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে। আসল অলিভ অয়েল কখনো পাতলা টিন প্লাস্টিক বোতলে ভরে উৎপাদন করা হয় না।
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় হচ্ছে এই তেলে ম্যাক্সিমাম মনোসেচুরেট ফ্যাট থাকায় এটি অন্যান্য নকল তেলের চেয়ে বেশি ঘনত্ব। যার কারনে এই তেল ঠান্ডা জায়গায় এর ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘন দেখা যায়।
তাই কম তাপমাত্রা নকল তেলের ঘনত্ব পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটা দেখে সহজে চেনা যাবে সেটা আসল না নকল তেল । তাছাড়াও ফ্রিজ টেস্ট করেও আসল নকল অলিভ অয়েল চেনা যায়। একটি পাত্র নিয়ে দুই ঘন্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে অলিভ অয়েল রেখে দিতে হবে।
যদি দেখা যায় অলিভ অয়েল জমে শক্ত হয়ে গেছে অথবা লিকুইড নেই তাহলে বুঝতে হবে অলিভ অয়েল তেলটি খাঁটি নয়। আর যদি দেখা যায় এটি হালকা জমে গেছে অথবা ঘন হয়ে গেছে তবেই বুঝতে হবে তেলটি খাঁটি।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল চেনার উপায়-What is extra virgin olive oil
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সব সময় ডার্ক মোটা কাঁচের বোতলে স্টোর করা হয় এবং সূর্য লোক থেকে দূরে রাখা হয়। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কখনোই স্বচ্ছ প্লাস্টিক মেটাল পাত্রে করে সেল করা হবে না। এটা একটি নির্দিষ্ট কোয়ালিটি বজায় রেখে তৈরি করা হয়।
আসল এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েলের ম্যাক্সিমাম মনো ছেচুরেটেড ফ্যাট থাকায় এর ঘনত্ব অন্য তেলের চেয়ে বেশি হয় একই কারণে ফ্রিজে রাখা হলে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ঘন হয়ে যায়।
তাই ফ্রিজের নিম্ন তাপমাত্রায় তেলের ঘনত্ব চেঞ্জ হচ্ছে কিনা সেটা দেখে আর আসল অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন তেলের ভেতর তফাৎ বের করা যেতে পারে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর দাম তুলনামূলকভাবে বাজারে অন্যান্য তেলের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
তাই এই তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এর মেয়াদ একটু বেশি সময় ধরে দিয়ে থাকেন। এই তেল প্রোডাকশন করা বেশ কষ্টকর। তাই এই তেলের দামটা একটু বেশি ধরা হয় আধা লিটার বা ১ লিটার এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি করা সম্ভব নয়। ।
ইউরোপ থেকে আমদানি হওয়া এক্সট্রা ভার্জিন তেলে ডিওপি এবং আমেরিকা থেকে আমদানি হওয়া অরিজিনাল প্রোডাক্টে সি ও ও সি সিল থাকবে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সব সময় ডার্ক মোটা কাঁচের বোতলে স্টোর করা হয়।
চুলের যত্নে অলিভ অয়েল-Olive oil for hair
ত্বক ও চুলের যত্নে যে সকল প্রসাধনী তৈরি করা হয় তার বেশিরভাগ প্রসাধনের মধ্যেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে শীতকালে অলিভ অয়েলের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। অলিভ অয়েলের ভিটামিন এ ,ই, এবং এর সাথে তিন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে।
চুলকে নরম ও মসৃণ করতে হাইড্রেট করতে চুলের গোড়া মজবুত করতে অলিভ অয়েল তেলের কোন জুড়ি নেই। অলিভ অয়েল এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের এন্টি মাইক্রোবিয়াল, প্রোটিন, এন টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য, যা চুলের রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে।
এই তেল বহুল প্রচলিত। চুলের বৃদ্ধি উজ্জ্বলতা বাড়ায় এই তেল ব্যবহার কর ফলে। এই তেলচুলে ব্যবহার করলে চুল ঘন হবে। চুলের ডগা ফাটা থেকে রক্ষা করবে। এই তেল খুশকি দূর করে থাকে। অলিভ অয়েল দিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
যেমন- ডিম ও পরিমাণমতো অলিভ অয়েল নিয়ে গেন্ডার মেশিন দিয়ে ব্লেন্ড করে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রনটি চুলের গোড়ায় মেখে কমপক্ষে এক ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে একদিন করতে পারলে খুশকি দূর হবে।
সাথে চুল হবে মজবুত এবং ঝলমলে। তবে যাদের এই তেল ব্যবহার করলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিবে তাদের এ তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম-সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
আধা কাপ অলিভ অয়েল গরম করে তাতে চা এর লিকার মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিলেই কন্ডিশনার এর উপকার পাওয়া যাবে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ৪৫ চামচ মিশিয়ে নিলে স্নানের জলে সেটা ত্বককে নরম তো রাখবে সারা দিনে ঘাম হবে অনেক কম।
ভোর তোলার পর বা দাড়ি কামানোর পর ত্বক জ্বালা করলে বা কোন রকম হ্রাস বের হলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে সেটা আর হবে না।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম-জেনে নিন শতভাগ কার্যকর
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায় তবে এটা ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে।রোদে যাওয়ার আগে যদি অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায় তাহলে সানবার্ন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের স্কিনকে যে কালচে ভাব করে দেয়।
নিয়মিত অলিভ অয়েল মুখে ব্যবহার করলে সেটা দূর হয়। ব্রণের ক্ষেত্রে এ তেল বেশ কার্যকর। লবণ এর সাথে যদি অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রণ ভালো হয়ে যাবে। লবণ মুখে এক্সপলিউশন করে এবং এই তেল মুখের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েলের রয়েছে লাইকোনিক এসিড যা পানি বাষ্প হতে দেয় না। অলিভ অয়েল এর সাথে যদি আলমন্ড অয়েল নাইট ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করা যায় তাহলে তোকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই উপাদানটি যদি নিয়মিত ব্যবহার করা যায় তাহলে ত্বক উজ্জ্বল হবে, কালো দাগ দূর হবে, এবং ত্বক কোমল ও নরম হবে। গোসলের পরে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করলে এটি মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
ত্বকের জন্য কোন অলিভ অয়েল ভালো-জেনে নেওয়া যাক
ভেষজ গুনে ভরপুর অলিভ বা জলপাই ফলের নির্যাস বা তেলকে তরল সোনা বলেও আখ্যায়িত করা হয়। যুগ যুগ ধরে এই তেল রান্না ছাড়াও ঘরোয়া চিকিৎসার নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রূপচর্চার ক্ষেত্রেও অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
ত্বকের যত্নে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তেল অনেক বেশি ভালো। ত্বককে উজ্জ্বল করতে এই তেল বেশ কার্যকর। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তেল দিয়ে মুখে মেসেজ করলে মুখ নরম কোমল ও উজ্জ্বল হবে। মেকআপ রিমুভার হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা হয়।
পরিশেষে
প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই অলিভ অয়েল তেল সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন এবং আমি আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন। যদি কিছুটা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি সকলের সাথে শেয়ার করবেন।
এ ধরনের আর্টিকেল সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের পাশেই থাকুন। সবশেষে আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের মঙ্গল কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url