এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স কিভাবে করব জেনে নিন-২০২৪
প্রিয় পাঠক আপনারা অনেকেই ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট লাইসেন্স কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে google এ সার্চ করে থাকেন বা ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন। আমি আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবো।
আপনারা যদি এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে স্বাগতম।
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ব্যবসায়িক জাতি গঠনের কোন বিকল্প নেই। আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো আপনি কিভাবে ইমপোর্ট লাইসেন্স করবেন তারপর কিভাবে এক্সপোর্ট লাইসেন্স করবেন, কোথায় করবেন, কতদিন লাগবে।
নিজে একা করতে পারবেন কিনা অথবা কোন দালালের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হবে কিনা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
আমদানি (Import) রপ্তানি (Export) লাইসেন্স বা IRC ও ERC সম্পর্কে জানুন
যেকোনো ব্যবসার জন্য প্রাথমিক চারটা ডকুমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। আপনি ইম্পোর্টার হন বা এক্সপোর্টার হন প্রথমেই আপনার ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। লাইসেন্সে লেখা থাকতে হবে আপনি আমদানি কারক এবং রপ্তানি কারক।
আপনি যদি শুধু ইমপোর্ট করতে চান তাহলে আপনি ইমপোর্ট এর লাইসেন্স করবেন আবার যদি আপনি শুধু এক্সপোর্ট করতে চান তাহলে শুধুমাত্র আপনি এক্সপোর্টের লাইসেন্স করবেন। ট্রেড লাইসেন্স পেতে হলে সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রত্যেক জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময় থাকে। প্রত্যেক ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের ঘরে বসে আয় করার উপায়
আপনি যদি খুচরা বিক্রেতাও হন তাহলেও ট্রেড লাইসেন্স দরকার আবার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বিজনেস করতে চাইলেও আপনার ট্রেড লাইসেন্স দরকার। অর্থাৎ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোন মানুষ ব্যবসা করতে পারবে না। রপ্তানি লাইসেন্স করতে হলেও সর্বপ্রথমে লাগবে ট্রেড লাইসেন্স।
এই ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা খরচ হয় সেটা নির্ভর করে আপনি কি গ্রামে করছেন, নাকি শহরে করছেন, নাকি সিটি কর্পোরেশনে করছেন সেটার উপরে। ট্রেড লাইসেন্স এরপর যে ডকুমেন্টটি আপনার প্রয়োজন হবে সেটা হল টিন সার্টিফিকেট।
এটি খুবই সহজ আপনি গুগল থেকে How to register e-tin লিখে যদি সার্চ দেন তাহলে সাথে সাথে লিংক চলে আসবে। আপনাকে মোবাইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং এনআইডি অনুযায়ী তথ্য দিতে হবে। তাহলে আপনার ই-টিন যুক্ত হবে। সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কাগজের মধ্যে বারকোড থাকবে।
যদি সেখানে বারকোড থাকে তাহলে সেটা ই-টিন। টিন সার্টিফিকেট আপনি নিজে যদি করেন তাহলে সম্পূর্ণ ফ্রি, আর যদি কাউকে দিয়ে করান তাহলে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারে। আমরা যারা একের অধিক মিলে কাজ করতে চাই তাদেরকে কিন্তু প্রথমে ট্রেড লাইসেন্স নয়।
বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা হল রেজিস্টার অফ জয়েন্ট স্টোক কোম্পানি সেখান থেকে ইন কর্পোরেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এটার ফি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে সেটা নির্ভর করবে আপনি কত টাকার মূলধন অথরাইজ করবেন। তার ওপর নির্ভর করবে যে আপনার ফি কত হবে।
আপনাকে প্রথমে নামের ছাড়পত্র নিতে হবে আপনি যে নামে কোম্পানি দিবেন সেই নামটি ইউনিক কিনা, সে নামে অন্য কারোর কোম্পানি আছে কিনা এই বিষয়টা একটি সার্ভারে চেক করা হয়। যদি সে নামটি অন্য কারোর না থেকে থাকে তখন আপনাকে নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে এবং আপনাকে অনুমোদন নিতে হবে।
অনুমোদন হওয়ার পরে ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। টাকা জমা দিয়ে ডকুমেন্ট আপলোড করার পর এক সপ্তার মধ্যেই আপনার রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। যদি আমরা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করি তাহলে সবার আগে ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
আর যদি আমরা লিমিটেড কোম্পানি দিয়ে ব্যবসা করি তাহলে সবার আগে নামের ছাড়পত্র লাগবে, তারপরে ইন কর্পোরেশন সার্টিফিকেট, তারপরে টিন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এরপরে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি হবে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে কোন না কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হবে।
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে খুব বেশি টাকার লাগেনা তবে আপনি যদি বেশি টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলেন তাহলে ব্যাংকের কাছে আপনার গুরুত্বটা বাড়বে। কারণ ব্যাংক সাধারণত দুই ভাবে তার ক্লায়েন্টকে মূল্যায়ন করে এখনো সে কত টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলেছে আরেকটি হলো সে কি পরিমাণ টাকা ট্রানজেকশন করেছে।
তাই অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনাকে ট্রানজেকশন চালিয়ে যেতে হবে। যাতে ব্যাংকের কাছে আপনার ভ্যালুয়েশন বাড়ে। এবার আপনার যে বিষয়টি প্রয়োজন হবে সেটা হল চেম্বার অফ কমার্স। আপনি যখন চেম্বার অব কমার্সের মেম্বার হবেন তখন আপনাকে সেখান থেকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।
আপনি চাইলে এমন অনেক চেম্বারের মেম্বার হতে পারেন তবে একটি চেম্বার এর মেম্বার হওয়া বাধ্যতামূলক। চেম্বারের মেম্বার হওয়ার জন্য তিনটা ডকুমেন্ট লাগে ট্রেড লাইসেন্স, তিন সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক একাউন্ট। এই তিনটি ডকুমেন্ট নিয়ে আপনি যখন প্রতিষ্ঠানে যাবেন তখন তারা আপনাকে একটি ফর্ম দেবে।
সেখানে ফ্রি বাবদ কিছু টাকা প্রদান করতে হবে সেটা বিভিন্ন এমাউন্টের হতে পারে। প্রত্যেকটি জেলাতেই চেম্বার অফ কমার্স প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। কিন্তু আপনি যখন ইম্পোর্টার বা এক্সপোর্টার হতে চান তখন আপনাকে আইআরসি এবং ইআরসি সার্টিফিকেট নিতে হবে।
অর্থাৎ আমদানিকারক এর জন্য লাগবে আইআরসি আর রপ্তানি কারকের জন্য লাগবে ইআরসি সার্টিফিকেট। এর জন্য আবেদন করতে হবে চিপ কন্ট্রোলার অব এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট। আসলে ইমপোর্ট লাইসেন্স করতে কতগুলো ক্রাইটেরিয়া আছে।
যেমন ২৫ লক্ষ টাকার এক রকম ফি ১ কোটি টাকার এক রকম ফি, আনলিমিটেড একটা ফি, তবে আপনি যদি 50 লক্ষ টাকার বাৎসরিক মেয়াদে আইআরসি করেন তাহলে আপনাকে জমা ফি দিতে হবে ১৮০০০ টাকা।
এর জন্য কোন ব্যক্তির প্রয়োজন নেই কোন সুপারিশের প্রয়োজন নেই খুবই সিম্পল একটা কাজ করতে হবে, খুবই সিম্পল একটি ফরম পূরণ করতে হবে সিসিআই এর ওয়েবসাইটে এভেলেবল। যারা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা করে তাদের লাইসেন্স গুলো ব্যাংকে জমা রাখতে হয়।
আপনার এক্সপোর্ট এবং ইমপোর্ট লাইসেন্সের নিবন্ধন হওয়ার পরে বাংলাদেশের যতগুলো এ্যম্বাসি সারা পৃথিবীতে রয়েছে সব এ্যম্বাসিতে আপনার তথ্য চলে যাবে, আপনি যে দেশের একজন ইমপোর্টার এবং যারা ওয়েবসাইটে ঢুকবে তারাও দেখতে পাবে যে আপনি একজন নিবন্ধিত ইমপোর্টার।
পরবর্তীতে আপনাকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার করতে হবে যাতে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার পর পনের সাথে ভ্যাট করে বিক্রয় করতে পারেন। তাহলে ইম্পোর্টার এবং এক্সপোর্টার হতে হলে মোট ছয়টি ডকুমেন্ট থাকতে হবে তা নিম্নরূপঃ
- ট্রেড লাইসেন্স
- টিন সার্টিফিকেট
- ব্যাংক একাউন্ট
- চেম্বার অব কমার্স
- আইআরসি ইমপোর্টার হলে
- ইআরসি এক্সপোর্টার বলে
- এবং ভ্যাট
আর যদি এক্সপোর্টার এবং ইমপোর্টার দুইটারই লাইসেন্স লাগে তাহলে সাতটি ডকুমেন্ট লাগবেঃ
- ট্রেড লাইসেন্স
- টিন সার্টিফিকেট
- ব্যাংক একাউন্ট
- চেম্বার অফ কমার্স
- আইআরসি
- ইআরসি
- ভ্যাট
এই সাতটি ডকুমেন্ট যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি বৈধ একজন এক্সপোর্টার এবং ইম্পোর্টার। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে খুব বেশি যদি লাগে দুই মাসের মধ্যে আপনার এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। ৫০ লক্ষ টাকার যদি একটি আইআরসি আমদানি পারমিশন সহ আপনার ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে।
আর যদি টিআরসি করতে চান এর কোন লিমিট নেই আপনি যদি হাজার কোটি টাকাও পাঠাতে চান আপনার ফি কিন্তু একটাই আট হাজার টাকা তাহলে এক্ষেত্রে আপনার খরচ যাবে মাত্র ২৫ হাজার টাকা মধ্যে।
আর দুটো যদি একসাথে করতে চান তাহলে ৭৫ হাজার টাকা মতো খরচ করতে পারে। এটি করার পরে আপনি বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে বৈধভাবে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারবেন।
পরিশেষে
প্রিয় বন্ধুগণ যারা এ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন আশা করি আপনারা এই বিষয়ে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। এ ধরনের আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন।
সবশেষে আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্যতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url