ঘি খাওয়ার উপকারিতা এবং ঘি খাওয়ার নিয়ম- সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
প্রিয় বন্ধুগণ আজকের আর্টিকেলে ঘি খাওয়ার উপকারিতা এবং ঘি খাওয়ার নিয়ম, ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময়, বাচ্চাদের জন্য ঘি খাওয়ার উপকারিতা এবং খাঁটি কি চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী তাদেরকে আজকের আর্টিকেলে স্বাগতম।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক ঘি একটি পুষ্টিকর খাবার। এর মধ্যে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই পুষ্টিগুণ অনেকেরই অজানা্ আপনারা অনেকেই ঘি এর পুষ্টিগুণ জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন। তাই আশা করছি আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক বেশি ইনফরমেটিভ হবে। ঘি সম্পর্কে জানতে এ পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা এবং ঘি খাওয়ার নিয়ম-সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
ঘি এর ব্যবহার পুরনো দিন থেকে চলে আসছে। কিছু মানুষ ঘি খেতে পছন্দ করেন আবার কিছু মানুষ ঘি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু ঘি না খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে সবদিক থেকে ক্ষতি হয় কারণ এর মধ্যে যে পুষ্টিগুণ থাকে তা অন্য কোন খাবারে পাওয়া যায় না।
অনেকে ভেবে থাকেন ঘি খেলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় কিন্তু এই কথা পুরোপুরি সত্য নয়।পরিমাণ মতো ঘি খেলে শরীরের অনেক উপকার রয়েছে। ঘি তে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরের শক্তি যোগায়।
এছাড়াও রয়েছে স্বাস্থ্যকর ওমেগা ফাটি এসিড। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এটা হার্ট ভালো রাখতে,দৃষ্টিশক্তি উজ্জ্বল রাখতে,ক্যান্সার প্রতিরোধে,কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। ঘি খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
ঘি ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। ঘি হজম শক্তি বাড়ায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। ক্ষতস্থান সারাতে ঘি সাহায্য করে। ঘি অনেক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি খাবার।
কিন্তু পরিমাণে বেশি খেলে এটা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি সঠিক সময়ে খাওয়া তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার । দেশী গরুর ঘি কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে না বরং এটা কমাতে সাহায্য করে। ঘি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে তাই বাচ্চারা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন ঘি খাওয়া উচিত।
একজন ব্যক্তি প্রতিদিন তিন থেকে চার চামচ ঘি খেতে পারেন। ঘি সবজি, ডাল অথবা রুটি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি তেলের পরিবর্তে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘি এর পুষ্টি উপাদান-সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক
এখানে রয়েছে একাধিক পুষ্টি উপাদান যা মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার করে থাকে, এতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ফ্যাটি এসিড এবং প্রচুর পরিমাণে এনার্জি। হাতে যদি প্রতিদিন এক চামচ করে ঘি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে এনার্জি আসবে বল শক্তি বাড়বে।
যার ফলে কর্ম দক্ষতা ও কর্ম সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘি এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই এবং এ যার কারণে তাদের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি তকের সৌন্দর্য কোমলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
যারা ত্বকের উজ্জ্বলতা নিয়ে চিন্তিত তারা নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। যদি দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন অভ্যাস করতে পারেন। ঘি এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
এছাড়া গির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফেটি অ্যাসিড এনার্জি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এজন্য যারা জিম করে তারা প্রচুর পরিমাণে ঘি খেয়ে থাকে। ঘি এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে, যা শরীরের মাংসপেশী ও হাড় গুলোকে শক্ত, মজবুত রাখেতে ভূমিকা রাখবে।
শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দিলে ডায়াবেটিস সমস্যা দেখা দেয় নিয়মিত যদি ঘি খেতে পারেন তাহলে ইনসুলিনের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে ফলে আপনার ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা অনেকখানি কমে আসবে।
গরম ভাতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা এবং ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময় জানুন
ঘি আমাদের শরীরের অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ চাহিদা পূরণ করে থাকে। আমাদের শরীরের মধ্যে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এতে প্রচুর পরিমাণে বিউটারিক অ্যাসিড থাকার কারণে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমরা ভাতের সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমে যায়।
যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা খুবই উপকারী। কারণ ভাতের মধ্যে গ্লাসনিক ইনডেক্স বেশি হওয়ার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিমাণে বেশি খাওয়া উচিত নয়। তবে এর মধ্যে একটা চামচ ঘি মিশিয়ে নিলে গ্লাইসনিক ইনডেক্স যেহেতু কমে যায়।
সেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঘি খাওয়া উপকারী। গরম ভাতে ঘি মিশিয়ে খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় পাশাপাশি দৃষ্টি শক্তি বাড়ে শরীরের সন্ধি বা জোড়াগুলো সঠিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ঘি সকালে এবং দুপুরে খাওয়া ভালো। রাতের বেলা ঘি খাওয়া উচিত নয়। এতে হজম ভালো হয়।
বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
বাচ্চাদের প্রতিদিনই যে ঘি খাওয়াতে হবে ব্যাপারটা এমনটা নয়, অল্টারনেটিভ হিসাবে যে সমস্ত খাবার গুলো রয়েছে সেগুলো খাওয়ানো যেতে পারে মাঝে মাঝে কি খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। বাচ্চাকে প্রতিদিন রান্নার সাথে যদি মিশিয়ে দেন সেটা ভালো হবে সেটাতে কোন অসুবিধা হবে না।
ঘি খুবই ভালো একটা খাবার এটার মধ্যে ভালো ফ্যাট রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার বয়স যখন ছয় মাস হয় বা ছয় মাস পর থেকে যখন খিচুড়ি বা ভাত জাতীয় খাবার খাওয়ানো অভ্যাস শুরু করা হয়, তখন থেকেই এর মধ্যে ঘি মিশিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করা যেতে পারে।
তবে যখন বাচ্চাকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যেই খাওয়াবেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিমাণটা বেশি পরিমাণ হওয়াটা উচিত হবে না সে ক্ষেত্রে এক চামচ বা দুই চামচ নাই চা চামচের হাত চামচ খাওয়াতে পারেন এতে কোন অসুবিধা হবে না।
ঘিতে আছে স্বাস্থ্যকর ওমেগাফাটি এসিড যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যে সমস্ত বাচ্চারা অস্বাভাবিক ভাবে ওজন বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন অসুস্থ জনিত কারণে তারা ঘি খেলে যে ওজন আরো বাড়বে ব্যাপারটা এমনটা নয় বরং ওজনটা ধীরে ধীরে কমবে।
আরো পড়ুনঃ প্রিয় মানুষের রাগ ভাঙ্গানোর উপায়
এছাড়াও বাচ্চাদের শরীরের মধ্যে প্রচুর এনার্জি পাবে, বাচ্চারা যেহেতু প্রচুর পরিমানে খেলা করে তাই ক্লান্তি অনুভব কম আসবে পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাচ্চাদের বেশি ও হাড় মজবুত করতে গিয়ে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
তাই গরম ভাতের মধ্যে ঘি মিশিয়ে বাচ্চাদেরকে খাওয়াতে পারলে যেমন ফ্লেভার পরিবর্তন হয়ে বাচ্চাদের মুখে রুচি বাড়াতে পারে তেমনি এ সমস্ত উপকার পেতে বাচ্চাদেরকে কি খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
খাঁটি ঘি চেনার উপায়-জানান শতভাগ কার্যকর
খাটি ঘি চিনতে হলে সহজ কিছু উপায় রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো হাতের তালুতে সামান্য কিছু পরিমাণ ঘি নিতে হবে যদি তা স্বাভাবিকভাবে গলতে শুরু করে তবে বুঝবেন এটি খাঁটি কি মানুষের শরীরের তাপমাত্রায় এই উপাদানটি গলে যায়।
চুলাই কোন পাত্র হালকা গরম করুন তারপরে এর মধ্যে কিছু পরিমাণ ঘি রাখুন যদি দেখেন ঘি বলতে অনেক সময় নিচ্ছে বা রং বদলে হলুদ হয়ে যাচ্ছে তবে বুঝবেন তাদের ভেজাল আছে। কারণ ঘি যদি খাঁটি হয় তাহলে হালকা গরম করে দেওয়ার সাথে সাথে ঘি গলে যাবে।
আবার একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে ঘি যে বয়ামের মধ্যে রাখা আছে সেই বয়াম সহ গরম পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন গলে গেলে ফ্রিজে রেখে দেন যদি দেখেন ঘি বয়ামের মধ্যে একই রং নিয়ে জমাট বেধে আছে তবে বুঝবেন এটি খাঁটি ঘি।
এর মধ্যে অন্য কোন উপাদান মেশানো থাকলে সেগুলো আলাদা আলাদা ভাবে বা আলাদা আলাদা স্তরে জমা হবে। ফলে সহজেই বোঝা যাবে এটি খাঁটি নাকি ভেজালযুক্ত।
পরিশেষে
প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা যারা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন আমি আশা করি তারা ঘি এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন পাশাপাশি উপকৃত হয়েছেন। এই ধরনের আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন।
সবশেষে আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্যতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি । ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url