ব্যবসার প্রচারের জন্য ফেসবুক মার্কেটিং কেন এবং কিভাবে করতে হবে?
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব ফেসবুক মার্কেটিং কেন এবং কিভাবে করতে হবে। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি অনেক ইনফরমেটিভ এবং আপনি যদি ভালোভাবে পোস্টটি পড়েন তাহলে সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আপনি যদি এই সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম।
ভূমিকা
প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই পোস্টটিতে ফেসবুক মার্কেটিং কি? কত প্রকার, ফেসবুকে লাইক বাড়ানোর টিপস, ফেসবুকে ফ্রী ট্রাফিক আনার উপায়, ফেসবুক পেজের রিচ কমে যাওয়ার কারণ সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
ব্যবসার প্রচারের জন্য ফেসবুক মার্কেটিং কেন এবং কিভাবে করতে হবে?
ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক মার্কেটিং হলো ব্যবসার প্রচার বা মার্কেটিং এর কাজ যখন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে করে থাকি তখন সেটাকে ফেসবুক মার্কেটিং বলে।
ফেসবুক মার্কেটিং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক বেশি ব্যবহার করে থাকে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে।
অর্থাৎ ব্যবসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রাফিক বা কাস্টমার ফেসবুক থেকেই পেতে পারি। কেননা এই ফেসবুক থেকেই অনেকেই লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে।
ফেসবুক মার্কেটিং সাধারণত দুই প্রকার
অর্গানিক মার্কেটিং- অর্গানিক মার্কেটিং হচ্ছে ফ্রি মার্কেটিং। অর্থাৎ কোন টাকা পয়সা খরচ না করে যেভাবে ফ্রিতে আপনার প্রোডাক্ট বা সেবা মার্কেটিং করবেন সেটাই হচ্ছে অর্গানিক মার্কেটিং। অর্গানিক মার্কেটিং যেভাবে করা যেতে পারে তা হল, ফেসবুক গ্রুপ, পেইজ, বিভিন্ন পেজের কমেন্ট, তারপর শেয়ারের মাধ্যমে।
পেইড মার্কেটিং- যখন আপনি টাকা দিয়ে মানুষের কাছে আপনার প্রোডাক্ট বা সেবা প্রচার করবেন ফেসবুকে, তখন এটিকে বলা হয় পেইড মার্কেটিং। পেইড মার্কেটিং করতে হলে অবশ্যই আপনাকে টাকা দিতে হবে। এর জন্য আপনার অ্যাড ম্যানেজার থাকতে হবে। যা আপনার ইতিমধ্যেই রয়েছে। এটা আপনাকে ফেসবুক দিয়ে দিয়েছে।
ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে পেইড মার্কেটিং অনেক বেশি এফেক্টিভ। কারন অনেক মানুষের কাছে আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা সেবা পৌঁছাতে পারছেন। সচরাচর এটা ফেসবুক বুষ্ট নামে বেশি পরিচিত।
ফেসবুকে লাইক বাড়ানোর টিপস
আমরা অনেকেই এখন ফেসবুক চালাই। এদের মধ্যে অনেকে বিজনেস পেজ রয়েছে ফেসবুকে। এখন অনেকেই একটি বিষয় নিয়ে প্রায় বলে থাকেন যে পেইজে বা আইডিতে লাইক বাড়ে না কিংবা আসে না। এটি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। তাই কিভাবে আপনি আপনার ফেসবুক পেজের লাইক বাড়াতে পারেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করব।
১- পোষ্টের সাথে ছবি সংযুক্ত করুনঃ আপনার যখন ফেসবুকে কোন কিছু পোস্ট করেন তখন দেখা যায় যে আপনি শুধু কিছু লিখে সরাসরি পোস্ট করেন। এটা এখন থেকে করবেন না। ফেসবুকে যখন কিছু লিখবেন চেষ্টা করবেন তার সাথে একটি ছবি সংযুক্ত করতে। তবে সর্বোচ্চ পাঁচটি ছবি দিতে পারেন।
কেননা শুধু লেখা দিলে অনেক সময় অনেকেই এড়িয়ে যায় কিন্তু ছবিসহ দিলে তা কিছুটা হলেও ফোকাসে আসে। তো এখন থেকে চেষ্টা করবেন কোন কিছু লিখার সাথে ছবি সংযুক্ত করা।
২- ইন্টারেস্টিং পোস্ট বেশি করুনঃ এমন কিছু লিখুন যা আপনাকে আরো আগ্রহী করে তুলবে। তাই বেশি স্টোরি, আকর্ষণীয় জোকস বা টাটকা খবর পোস্ট করুন এতে করে মানুষ আপনার লেখা বা ছবি বেশি দেখবে এবং পড়বে এতে আপনার লাইক বাড়বে।
৩- ওয়েবসাইট থাকলে ফেসবুক পেজের লাইক প্লাগিন ব্যবহার করুনঃ আপনার যদি একটু ওয়েবসাইট থেকে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই ওয়েবসাইটে ফেসবুক পেজে লাইকের প্লাগিন সংযুক্ত করে নিবেন। এতে করে যারা আপনার ওয়েবসাইটে আসছে তারা ওয়েবসাইট থেকেই আপনার পেইজে লাইক দিতে পারবে।
তাই যদি আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে অবশ্যই ফেসবুক পেজ লাইক যুক্ত করে নিন।
৪- অন্য পেজে অংশগ্রহণ করুনঃ চেষ্টা করবেন অন্য পেজে কমেন্ট করে উপদেশমূলক কিছু লিখতে, এতে করে কেউ এক পলকের জন্য হলেও আপনার পেজে আসবে এবং লাইক দিতে পারে যদি ভাল লাগে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা কিছু স্মল বিজনেস আইডিয়া
৫-পোস্ট ছোট ও ইন্টারেস্টিং করুনঃ পেইজে লাইক বাড়ানোর আরেকটা উপায় হচ্ছে পেইজে ছোট পোস্ট করা এবং ইন্টারেস্টিং ইনফরমেটিভ পোস্ট করা। কেননা বড় পোস্ট করলে অনেকেই পড়তে চায় না বিরক্তবোধ করে। চেষ্টা করবেন ১২০ ওয়ার্ডে লেখতে, যদি বড় হয়ে যায় তবে চেষ্টা করবেন তা যেন ১৫০ ওয়ার্ডের বেশি না হয়।
আর সব সময় যে ১২০ ওয়ার্ড বা ১৫০ ওয়ার্ড লিখতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়। আপনি পঞ্চাশ ওয়ার্ডেও চাইলে ছোট ইন্টারেস্টিং কিছু লিখতে পারেন।
৬- বিভিন্ন রকম ডিসকাউন্ট অফার দিনঃ বিজনেস অনলাইন ভিত্তিক হয় অর্থাৎ ফেসবুকে তাহলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ডিসকাউন্ট দিন এতে কিছু লাভ রয়েছে।
- মানুষ আপনার পেজে লাইক দেবে
- স্বভাবতই আমরা অফার প্রিয় তাই অফার দিলে আপনার পেজে এনগেজ থাকবে
- এই অফার পোস্ট অনেকেই শেয়ার করে যা আপনার পোস্টে এংগেজমেন্ট আরো অনেক বাড়িয়ে দেবে
ফেসবুকে ফ্রি ট্রাফিক আনার উপায়
ফেসবুকে ফ্রিতে আপনি আপনার ফ্রি ট্রাফিক জেনারেট করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে কিছু টেকনিক ফলো করতে হবে নিচে তা উল্লেখ করা হলোঃ
১- নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবেঃ আপনি যদি ট্রাফিক বাড়াতে চান ফ্রিতে তাহলে নেটওয়ার্কিং এর কোন বিকল্প নেই। প্রথমত ফেসবুক পেজ থাকলে আপনার বন্ধু, বড় ভাই, আত্মীয়-স্বজন থাকলে তাদেরকে বলতে হবে পেজে লাইক দিতে এবং তাদের বলবেন ইনভাইট করতে। আর গ্রুপ থাকলে সেটি তো ইনভাইট করতে বলুন।
এখানে শেষ নয় এরপর তাদের বলবেন তারা যেন তাদের পরিচিতদের বলে মেম্বার অ্যাড পেজে লাইক দেওয়ার জন্য ইনভাইট করে। এছাড়া আপনার নেটওয়ার্কিং ভালো হলে বড় বড় যে পেজ রয়েছে তাদের বলে তাদের পেইজে আপনার ব্যবসা প্রমোট করতে পারেন।
২-গ্রুপ তৈরি করুনঃ আমরা সর্বোচ্চ পেজ খুলেই কাজ শেষ মনে করি। কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই তেমনটা নয়। আপনাকে আপনার ব্যবসার প্রচারের জন্য একটি ফেসবুক গ্রুপ লাগবে। ফ্রি ট্রাফিকের জন্য ফেসবুক গ্রুপ বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩- অন্য পেজ বা গ্রুপে অংশগ্রহণ করুনঃ আপনার নিশ রিলেটেড অন্য পেজে গিয়ে সেখানে মন্তব্য লিখে অংশ নিন। অবশ্যই পেজ থেকে কমেন্ট করবেন, আইডি থেকে নয়। পেজ বা গ্রুপে গিয়ে বলবেন না যে আমার পেজে লাইক দিন। আপনার মন্তব্য পছন্দ হলে আপনার পেইজে এমনিতেই আসবে।
৪- বড় পেজের মাধ্যমে প্রচারণা করুনঃ সবসময় আপনার নিশ রিলেটেড ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। এতে করে বড় বড় পেজে আপনার পেজের একটি ছোট্ট বিজ্ঞাপনেই হতে পারে বাজিমাত।
ফেসবুক পেজের রিচ কমে যাওয়ার কারণ
যাদের বিজনেস পেজ রয়েছে তাদের একটি কমন সমস্যা রয়েছে তা হল পেজের রিচ কমে যাওয়া। কিন্তু কেন রিস কমে যায় সেটা হয়তো আপনি জানেন না তাই আপনাকে এর সমাধান এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানো হবে। তো চলুন শুরু করা যাকঃ
১- নিয়মিত পোস্ট না করাঃ অনেকের পেজ রয়েছে যারা তাদের পেজে নিয়মিত পোস্ট করেন না। যার ফলে তাদের একটি অডিয়েন্স এরা তাদের পেজকে ভুলে যায়। আর অনেকদিন পর পোস্ট দিলেও ফেসবুক রিচ কমিয়ে দেয়।
২- বেশি বেশি সেল পোস্ট দেওয়াঃ আপনার পেইজে সারাদিন বিভিন্ন সেল পোস্ট দেন তবে স্বাভাবিকভাবেই রিচ কম পাবেন। কেননা মানুষ সারাদিন সেল পোস্ট দিলে দেখতে পছন্দ করে না। বিভিন্ন ইনফরমেটিভ ও বিনোদনমূলক পোস্ট দিন।
৩- টাকা দিয়ে ফলোয়ার বাড়িয়েছেনঃ অনেকেই বিভিন্ন প্যানেল থেকে পেজের জন্য ফলোয়ার কিনেন। আপনি হয়তো ১০০০ টাকায় এক লাখ কলার কিনতে পারবেন। কিন্তু এরা কেউ একটিভ নয়। পরে দেখবেন যে যখন এত বড় পেজে লাইক ৫-১০ টা আসে তখন ফেসবুক ব্লাকলিস্টে ফেলে দেবে এবং রিস্ক ডাউন করে দেবে।
৪- ভুল টার্গেটিং করাঃ টার্গেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যদি এটার ভুল করেন তবে সব শেষ। ধরুন আপনি ব্যবসা করছেন লেডিস ক্লথ নিয়ে কিন্তু টার্গেটিং করেছেন যারা টেক লাভার তাদের। এবার বলুন যে আপনার রিচ কমবে নাকি বাড়বে?
৫- ফেসবুকের এলগোরিদম পরিবর্তনঃ ফেসবুকের এলগারিদম বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়। তাই অনেক আপডেটের পর যেটা হয় বিভিন্ন পেজের রিচ ডাউন হয়। এটি তেমন সমস্যা নয়। আপনি আপডেট এর পর কি করতে হবে তাই একটু স্টাডি করলে সমাধান বের করতে পারবেন।
পরিশেষ
প্রিয় বন্ধুগণ আপনি যদি এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ফেসবুক মার্কেটিং কেন এবং কিভাবে করতে হবে পাশাপাশি ব্যবসার প্রচারের জন্য ফেসবুক মার্কেটিং কেন এবং কিভাবে করতে হবে সেই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।
যদি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনার কোন কাজে আসে তাহলে অবশ্যই বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্যতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url